আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে ইলেক্ট্রোলাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড এবং ফসফেট ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে। এগুলো রক্তচাপ, স্নায়ুর কার্যক্রম, পেশীর সংকোচন ও শরীরের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এদের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা শরীরে নানা জটিলতা তৈরি করে।
ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ
১. অতিরিক্ত ঘাম ঝরা – প্রচণ্ড গরমে বা ব্যায়ামের সময় অতিরিক্ত ঘাম হলে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বের হয়ে যায়।
২. ডিহাইড্রেশন (শরীরে পানিশূন্যতা) – পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া বা ডায়রিয়া, বমি হলে শরীর দ্রুত পানি হারায়।
৩. কিডনির সমস্যা – কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে ইলেক্ট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়।
৪. ডায়াবেটিস ও হরমোনজনিত সমস্যা – উচ্চ রক্তে শর্করা শরীরের পানি ও খনিজ লবণ বের করে দেয়।
৫. ওষুধ সেবন – বিশেষ করে ডায়ুরেটিকস, এন্টিবায়োটিক বা কেমোথেরাপির ওষুধ ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা কমাতে পারে।
৬. অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন গ্রহণ – এগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি ও লবণ বের করে দেয়।
ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়
- অবসাদ ও দুর্বলতা
-
মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি
-
পেশীতে টান বা ক্র্যাম্প
-
হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা
-
হাত-পা অবশ বা ঝিনঝিন ভাব
-
খিঁচুনি (গুরুতর ক্ষেত্রে)
প্রতিকার ও সমাধান
১. পানি ও ওআরএস খাওয়া – হালকা ডিহাইড্রেশনের সময় পানি ও ওআরএস খেলে শরীর দ্রুত সেরে ওঠে।
২. ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ –
- সোডিয়াম: লবণযুক্ত খাবার, স্যুপ
-
পটাশিয়াম: কলা, নারকেলের পানি, আলু
-
ক্যালসিয়াম: দুধ, দই, বাদাম
-
ম্যাগনেসিয়াম: পালংশাক, শস্য, ডাল
৩. নারকেলের পানি পান করা – এটি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়।
৪. অতিরিক্ত ঘাম হলে – স্পোর্টস ড্রিঙ্ক বা ওআরএস ব্যবহার করা।
- **ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া** – বারবার ইলেক্ট্রোলাইটের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা।
-
গরমে বা ব্যায়ামের সময় ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিঙ্ক সঙ্গে রাখা।
-
অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন পরিহার করা।
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা।
-
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, বিশেষ করে যাদের কিডনি বা ডায়াবেটিস সমস্যা রয়েছে।
উপসংহার
শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে তা হালকা হলেও অবহেলা করা উচিত নয়। সময়মতো পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করলে সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।