আজকের দৌড়ঝাঁপের জীবনে শরীরের যত্ন নিই ঠিকই, কিন্তু মনের যত্ন নেওয়া প্রায়ই ভুলে যাই। ফলাফল? অকারণ চিন্তা, মাথা ভার, ঘুমের সমস্যা আর অস্থিরতা।
কিন্তু সুখবর হলো – মনকে শান্ত রাখতে কোনো বড় খরচ বা সময় লাগে না। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের ছোট ছোট অভ্যাসেই আপনি পেতে পারেন গভীর মানসিক শান্তি।
আজকে আমরা শেয়ার করছি এমন ৫টি পরীক্ষিত মন্ত্র যা হাজারো মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।

মানসিক শান্তির ৫টি সহজ মন্ত্র
১. অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম (মাত্র ৫ মিনিট)
অনুলোম-বিলোম নামটি কোথা থেকে এলো?
“অনুলোম-বিলোম” একটি খাঁটি সংস্কৃত শব্দ।
এই নামটি প্রথম পাওয়া যায় প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো বিখ্যাত যোগগ্রন্থ “হঠযোগ প্রদীপিকা” বইয়ে (১৫শ শতাব্দী)।
সেখানে স্বাত্মারাম নামের এক যোগী লিখেছেন:
“অনুলোম-বিলোমং কুর্য্যাত্”
অর্থাৎ – এক নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে অন্য নাক দিয়ে ছাড়তে হবে।
এছাড়া আরেকটি প্রাচীন নাম আছে – “নাড়ীশোধন প্রাণায়াম”
(অর্থ: শরীরের তিনটি প্রধান নাড়ি – ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্নাকে পরিষ্কার করা)।
“অনুলোম-বিলোমকে যোগশাস্ত্রে বলা হয় ‘নাড়ীশোধন প্রাণায়াম’। এটি শরীরের বাম দিকের ঠান্ডা নাড়ী (ইড়া), ডান দিকের গরম নাড়ী (পিঙ্গলা) এবং মাঝের মূল নাড়ী (সুষুম্না)-কে পরিষ্কার ও ভারসাম্য করে। ফলে মন অল্প সময়ের মধ্যেই গভীর শান্তি পায়।”
সুতরাং আজ আমরা যে “অনুলোম-বিলোম” বলি, এটা সেই ৫০০ বছরের পুরোনো যোগ-বিজ্ঞানেরই আধুনিক নাম।
মাত্র ৫ মিনিট করলেই মন শান্ত হয়ে যায় – এটা আমাদের ঋষি-মুনিরা হাজার বছর আগেই আবিষ্কার করেছিলেন!
নিয়মিত এই প্রাণায়াম করলে মস্তিষ্কের দুই গোলার্ধের ভারসাম্য ফিরে আসে এবং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমে।
কীভাবে করবেন:
- আরামে বসুন, পিঠ সোজা।
- ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাসারন্ধ্র বন্ধ করুন।
- বাম নাসারন্ধ্র দিয়ে ধীরে শ্বাস নিন (৪ সেকেন্ড)।
- আংটি আঙুল দিয়ে বাম নাসারন্ধ্র বন্ধ করে ডান দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন (৪ সেকেন্ড)।
- দিনে ৫-১০ মিনিট করলেই যথেষ্ট।
২. মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন (১০ মিনিট)
বিজ্ঞান বলে, যারা নিয়মিত মাইন্ডফুলনেস করেন তাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা (ভয়ের কেন্দ্র) ছোট হয়ে যায়।
করার সহজ নিয়ম:
- শান্ত জায়গায় বসুন।
- চোখ বন্ধ করুন।
- শুধু শ্বাসের ওঠানামা লক্ষ্য করুন।
- মনে কোনো চিন্তা এলে জোর করে সরাবেন না, শুধু দেখুন আর ছেড়ে দিন।

৩. গ্র্যাটিচিউড জার্নাল (কৃতজ্ঞতা দিনের শুরু বা শেষে)
হার্ভার্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা লেখেন তাদের সুখের মাত্রা ২৫% বেড়ে যায়।
কী লিখবেন:
- আজ আমি কোন ৩টি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞ?
উদাহরণ: - আমার শরীর সুস্থ আছে।
- পরিবার আমাকে ভালোবাসে।
- আজ সকালে সুন্দর রোদ উঠেছে।
৪. প্রকৃতির কোলে ৩০ মিনিট হাঁটা
জাপানে এটাকে বলে “Forest Bathing”। গাছের ফাইটোনসাইড মানসিক চাপ ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
টিপস:
- সকালে সূর্যোদয়ের সময় হাঁটলে ভিটামিন ডি + সেরোটোনিন দুটোই পাবেন।
- ফোন পকেটে রাখুন, শুধু প্রকৃতি উপভোগ করুন।
৫. ডিজিটাল ডিটক্স – ঘুমের ১ ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ
নীল আলো (Blue Light) মেলাটোনিন হরমোন কমিয়ে দেয়। ফলে ঘুম আসে না, মন অস্থির থাকে।
করণীয়:
- রাত ৯-১০টার পর ফোন, ল্যাপটপ, টিভি বন্ধ।
- বই পড়ুন বা হালকা মিউজিক শুনুন।
- ফোনে “Bedtime Mode” চালু করুন।

শেষ কথা
মানসিক শান্তি কোনো বিলাসিতা নয়, এটা আপনার জীবনের অক্সিজেন।
আজ থেকেই এই ৫টি মন্ত্রের মধ্যে যেকোনো ২-৩টি বেছে নিয়ে শুরু করুন। মাত্র ৭ দিনেই আপনি নিজের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পাবেন।
আপনার প্রিয় মন্ত্র কোনটি?
কমেন্টে জানান আপনি কীভাবে আপনার মনকে শান্ত রাখেন। সবচেয়ে সুন্দর উত্তর আমরা ফিচার করব পরবর্তী পোস্টে! ❤️
আরও পড়ুন
🔗 সকালে স্বাস্থ্যকর রুটিন – ৩টি সহজ অভ্যাস
🔗 কম্পিউটার স্পিড ৫ গুণ বাড়ানোর টিপস
রোজগার-বিডি.কম Job News, Online Income, Question Bank