Breaking News

বিদ্যুৎ এর প্রিপেইড মিটার কি জনবান্ধব? কারণ, সমস্যার সমাধান ও প্রতিকার ও প্রয়োজনীয় কোড

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় দিন দিন প্রিপেইড মিটার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু অনেক ভোক্তা মনে করেন এটি সবসময় জনবান্ধব নয়। অনেকে অভিযোগ করেন যে প্রিপেইড মিটারে বিল বেশি আসে অথবা ইউনিট খরচ বেশি দেখায়। বাস্তবেই কি তাই? আসুন প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

 


 

প্রিপেইড মিটার কী?

 

প্রিপেইড মিটার হলো একটি ডিজিটাল মিটার যেখানে গ্রাহক আগেই টাকা রিচার্জ করে ব্যবহার করেন। সহজভাবে বললে, এটি মোবাইল রিচার্জের মত—আগে টাকা দিন, পরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন।

 


 

প্রিপেইড মিটারের সুবিধা (জনবান্ধব দিক)

 

  1. **স্বচ্ছ বিলিং ব্যবস্থা** – ইউনিট খরচ রিয়েল টাইমে দেখা যায়।
  2. **বিল বাকি রাখার সুযোগ নেই** – মাস শেষে ঝামেলা ছাড়াই বিল পরিষ্কার।
  3. **লোড কন্ট্রোল সহজ হয়** – কোন সময়ে বেশি খরচ হচ্ছে তা বোঝা যায়।
  4. **টাকা সাশ্রয়** – সচেতন ব্যবহার করলে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমে।
  5. **অটোমেটেড সিস্টেম** – মিটার রিডার নির্ভরতা নেই, তাই ভুল কম হয়।

 


 

কেন অনেক সময় বিল বেশি আসে?

 

যদিও প্রিপেইড মিটার স্বচ্ছ, তবে কয়েকটি কারণে অনেকের কাছে বিল বেশি মনে হতে পারে:

 

  1. **পিক আওয়ার চার্জ** – সন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সময়ে বিদ্যুতের ইউনিট চার্জ বেশি।
  2. **সিস্টেম চার্জ ও ভ্যাট** – প্রতিটি রিচার্জে ভ্যাট (VAT) ও সার্ভিস চার্জ কেটে নেওয়া হয়।
  3. **লোড বেশি হলে ইউনিট খরচও বেশি** – একসাথে ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করলে খরচ বেড়ে যায়।
  4. **গোপন খরচ** – স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকা টিভি, রাউটার, চার্জার ইত্যাদি ছোটখাটো যন্ত্রপাতি মিলেও ইউনিট খরচ বাড়ায়।
  5. **ভুল হিসাবের ধারণা** – পোস্টপেইডে অনেক সময় বিল মাস শেষে বোঝা যায়, কিন্তু প্রিপেইডে খরচ সাথে সাথেই চোখে পড়ে বলে বেশি মনে হয়।

তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ:

. মিটার যাচাই

  • মিটার সঠিকভাবে কাজ করছে কি না পরীক্ষা করুন
  • সব যন্ত্র বন্ধ রেখে মিটার ঘুরছে কি না দেখুন
  • সন্দেহ হলে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করুন

. বিদ্যুৎ ব্যবহার হিসাব

দৈনিক হিসাব = প্রতিদিন কত ইউনিট × প্রতি ইউনিট দর

মাসিক হিসাব = দৈনিক হিসাব × ৩০ দিন

 

প্রিপেইড মিটারের সম্পূর্ণ কোড তালিকা

মৌলিক তথ্য দেখার কোড:

  • #100# বা 100 – বর্তমান ব্যালেন্স চেক
  • #200# বা 200 – শেষ রিচার্জের পরিমাণ দেখা
  • #300# বা 300 – মোট ইউনিট ব্যবহার দেখা
  • #400# বা 400 – প্রতি ইউনিট দর দেখা
  • #500# বা 500 – জরুরি ক্রেডিট চেক/সক্রিয়

বিস্তারিত তথ্যের কোড:

  • 600 – গ্রাহক নম্বর দেখা
  • 610 – মিটার নম্বর দেখা
  • 620 – সর্বোচ্চ চাহিদা (Maximum Demand) দেখা
  • 650 – মিটার ব্যালেন্স ও সময় দেখা
  • 670 – টোটাল kWh (সর্বমোট ব্যবহার) দেখা
  • 680 – মিটার কানেকশন স্ট্যাটাস দেখা
  • 690 – সিগন্যাল কোয়ালিটি পরীক্ষা

রিচার্জ সংক্রান্ত কোড:

  • 800 – সর্বশেষ রিচার্জের তারিখ ও সময়
  • 810 – রিচার্জের ইতিহাস (শেষ ৫টি)
  • 820 – রিচার্জ করার নিয়ম দেখা
  • 830 – সর্বশেষ টোকেন নম্বর দেখা
  • 840 – রিচার্জ ব্যর্থতার কারণ জানা

প্রযুক্তিগত পরীক্ষার কোড:

  • 850 – ভোল্টেজ টেস্ট (Line Voltage)
  • 860 – কারেন্ট টেস্ট (Current Flow)
  • 870 – ভোল্টেজ পরীক্ষা (Phase wise)
  • 880 – পাওয়ার ফ্যাক্টর দেখা
  • 890 – ফ্রিকোয়েন্সি চেক

সাপ্তাহিক মাসিক রিপোর্ট:

  • 701 – গত ৭ দিনের ব্যালেন্স
  • 702 – গত ১৪ দিনের ব্যালেন্স
  • 703 – গত ৩০ দিনের ব্যবহার
  • 704 – দৈনিক গড় ব্যবহার
  • 705 – সাপ্তাহিক ব্যালেন্স পরীক্ষা

জরুরি সেবা কোড:

  • 901 – কাস্টমার সেবা নম্বর দেখা
  • 902 – টেকনিক্যাল হেল্পলাইন
  • 903 – জরুরি ক্রেডিট সীমা দেখা
  • 904 – মিটার ত্রুটি রিপোর্ট
  • 905 – লোড লিমিট চেক

মিটার সেটিংস কোড:

  • #110# – মিটার রিসেট (বিশেষ ক্ষেত্রে)
  • #120# – টাইম সিঙ্ক চেক
  • #130# – আলার্ম সেটিং দেখা
  • #140# – অটো রিচার্জ স্ট্যাটাস
  • #150# – প্রিপেইড মোড চেক

বিশেষ ফিচার কোড:

  • *100*টোকেন নম্বর# – রিচার্জ করার জন্য
  • *200# – STS (স্ট্যান্ডার্ড ট্রান্সফার স্পেসিফিকেশন) চেক
  • *300# – মিটার টেস্ট মোড
  • *400# – ডিসপ্লে টেস্ট
  • *500# – সাউন্ড টেস্ট (যদি থাকে)

তথ্য সংরক্ষণ কোড:

  • 720 – শেষ ৩০ দিনের বিস্তারিত
  • 730 – মাসিক সর্বোচ্চ ব্যবহার
  • 740 – মাসিক সর্বনিম্ন ব্যবহার
  • 750 – গড় দৈনিক খরচ
  • 760 – সবচেয়ে বেশি ব্যবহারের দিন

ত্রুটি নির্ণয় কোড:

  • 950 – মিটার এরর কোড দেখা
  • 951 – সিস্টেম স্ট্যাটাস চেক
  • 952 – কমিউনিকেশন এরর
  • 953 – হার্ডওয়্যার স্ট্যাটাস
  • 954 – সফটওয়্যার ভার্সন দেখা

বিশেষ নোট:

  • কোড গুলো মিটারের মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে
  • সব কোড সব মিটারে কাজ নাও করতে পারে
  • কিছু কোড শুধুমাত্র প্রযুক্তিবিদদের জন্য
  • সমস্যা হলে ১৬৬০৩ নম্বরে যোগাযোগ করুন

অভিযোগ সহায়তা

যোগাযোগের মাধ্যম:

  • নেসকো (NESCO): ১৬৬০৩
  • পল্লী বিদ্যুৎ: ১৬৮৯৯
  • ডেসকো: ১৬২৯৮
  • ডিপিডিসি: ১৬২৯৫
  • ওয়েজেস: ১৬২৯৬
  • পূর্বাঞ্চল গ্যাস: ১৬৪৯৫

অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য:

  • গ্রাহক নম্বর
  • মিটার নম্বর
  • সমস্যার বিবরণ
  • যোগাযোগের ঠিকানা

 

প্রতিকার ও সমাধান

 

লোড ম্যানেজমেন্ট করুন – পিক আওয়ারে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন।

এনার্জি সেভিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন – LED বাল্ব, 5-star rated ফ্রিজ/এসি।

স্ট্যান্ডবাই ডিভাইস বন্ধ করুন – ব্যবহার না করলে মাল্টিপ্লাগ বা সুইচ অফ করুন।

রিচার্জ হিসাব রাখুন – কোন সময়ে বেশি খরচ হচ্ছে তা নিয়মিত দেখে পরিকল্পনা করুন।

অ্যাপ/অনলাইন চেক করুন – অনেক প্রিপেইড মিটারে মোবাইল অ্যাপ থাকে, সেখান থেকে হিসাব ট্র্যাক করুন।

অভিযোগ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করুন – অস্বাভাবিক বিল মনে হলে বিদ্যুৎ অফিসে রিপোর্ট করুন।

 


 

 

প্রিপেইড মিটার কি আসলেই জনবান্ধব?

 

হ্যাঁ, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের জন্য অনেক জনবান্ধব। তবে ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে—পিক আওয়ারে ব্যবহার কমানো, এনার্জি সেভিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার, এবং নিয়মিত রিচার্জ মনিটর করা।

 


 

উপসংহার

 

প্রিপেইড মিটার আসলে একটি আধুনিক, স্বচ্ছ এবং কার্যকর সিস্টেম। তবে অনেক সময় বিল বেশি আসার কারণ হলো ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ, এবং পিক আওয়ার রেট। তাই ভোক্তাদের সচেতন ব্যবহার, সঠিক পরিকল্পনা, ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেই সমস্যা অনেকটাই সমাধান সম্ভব।

 


Check Also

মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া রোধে করণীয়: জীবনে এগিয়ে থাকার ১০টি কার্যকর উপায়

জীবন সবসময় সমানভাবে মসৃণ পথে চলে না। কখনো সাফল্য, কখনো ব্যর্থতা—এটাই স্বাভাবিক চক্র। তবে সমস্যার …

Leave a Reply